স্টক নিউজ বিডি প্রতিবেদন: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের রেকর্ড মুনাফা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কোম্পানিটির মুনাফায় আলাদিনের যাদুর চেরাগ পড়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার দরও পিছিয়ে নেই। মুনাফার আগে এগুচ্ছে শেয়ারদর। বর্তমান শেয়ার দর কোম্পানিটির সম্পদমূল্যের চেয়ে ৬ গুন বেশি। ক্যাটাগরির দিক থেকে কোম্পানিটি তেমন শক্তিশালী নয়। ৫ বছরের ডিভিডেন্ড পারফর্মেন্সও সন্তোষজন নয়। এরপরও কোম্পানিটির দর বেড়েছে অব্যাহত গতিতে। কোম্পানিটির সর্বশেষ দুই ২ প্রান্তিকের মুনাফায় অসম্ভব প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যা বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, মহাধসের পর থেকে অনেক ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির দরগুলো ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়েছে। সন্তোষজনক ডিভিডেন্ড দিয়েও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না। সেখানে কিভাবে বিকন ফার্মার মতো একটা দুর্বল মৌলের কোম্পানির দর এভাবে বাড়ে? পাশাপাশি করোনা মহামারীর মধ্যেও যেখানে বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যবসা খারাপ হওয়ায় তেমন একটা মুনাফা দেখাতে পারছে না, সেখানে কোম্পানিটির মুনাফায় অসম্ভব উম্ফলন হলো সেটা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। তবে এই মুনাফার পিছনে অদৃশ্য কোন কারণ রয়েছে কীনা- সেই প্রশ্নও করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে সতর্কতার সঙ্গে শেয়ারটিতে বিনিয়োগ করা। তা-না হলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
প্রথম প্রান্তিকের আয়:
প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২০) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়েছে ২৫ পয়সা। আগের বছর (জুলাই’১৯-সেপ্টেম্বর’১৯) একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১৮ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৭ পয়সা বা প্রায় ৩৯ শতাংশ ।
দ্বিতীয় প্রান্তিকের আয়:
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১ টাকা ১ পয়সা। আগের বছর (অক্টোবর-ডিসেম্বর’১৯) যা ছিল ১২ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয় বেড়েছে ৮৯ পয়সা বা ৭৪১ শতাংশের বেশি।
তৃতীয় প্রান্তিকের আয়:
আজ মঙ্গলবার (১৮ মে) প্রকাশিত হয়েছে কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ২৫ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে ১ টাকা ৭৬ পয়সা বা ৭০৪ শতাংশ।
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্মা ও রসায়ন খাতের কোম্পানি বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৩১ মার্চ, ২০২১ সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে চলতি অর্থববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ২৭ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৫৫ পয়সা।
৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ২২ টাকা ৭১ পয়সা।
তিন প্রান্তিকের আয়:
প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে অর্থাৎ গত ৯ মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ২৭ পয়সা। গত বছর যা ছিল ৫৫ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ইপিএস বেড়েছে ২ টাকা ৭২ পয়সা বা ৪৯৪ শতাংশ।
ছয় মাসের দরচিত্র :
কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ১৬ নভেম্বর। এর আগের দিন অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৬৮ টাকা ২০ পয়সা। পরদিন ১৬ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকায়। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর কয়েক কার্যদিবস ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে কোম্পানিটির শেয়ারদর।
কোম্পানিটির দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৩ টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ টাকা ৩০ পয়সায়। এ সময় ধারাবাহিকভাবে দর বাড়ার পর ২ কার্যদিবস কমতে দেখা গেছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে কমলেও তা ছিল নামে মাত্র। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৬ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত বছর ৩১ মে কোম্পানিটির দর ছিল ৬০ টাকা ৭০ পয়সা।
এক বছরের দরচিত্র :
প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে একটানা বেড়েছে। ২৬ জানুয়ারি যেখানে এ কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৭০ টাকা। মার্চের ১৫ তারিখে এর দর দাঁড়িয়েছিল ১৩৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রায় দেড় মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর দ্বিগুণ বেড়েছে। এরপর দর কমলেও তা স্বাভাবিক ওঠানামা হয়েছে।
দুই বছরের দরচিত্র:
দুই বছর লেনদেন অনুযায়ী বিকন ফার্মার শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ছিল ২০ টাকা ১০ পয়সা।
পিই রেশিও:
বর্তমান পিই রেশিও ও এনএভি হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ার দর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে কোম্পানিটির পিই রেশিও ৫০.০৪ পয়েন্ট (অনিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী) এবং ৭৬.৪২ পয়েন্ট (নিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী)।
ডিভিডেন্ড চিত্র:
কোম্পানিটির ৫ বছরের ডিভিডেন্ড পারফর্মেন্স ততটা সন্তোষজনক নয়। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, কোম্পানিটি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রতি বছর ৫ শতাংশ করে ক্যাশ, ২০১৮ সালে ৬ শতাংশ ক্যাশ ২০১৯ সালে ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
শেয়ার ধারণ চিত্র:
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে- ৩০০ কোটি টাকা ও ২৩১ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ২৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা। এ কোম্পানির ২ কোটি ৩১ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ৩৪.৭৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৩৫.২৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।
স্টক নিউজ বিডি.কম/ এসআর
আরও পড়ুন……